দারাজের নামে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ম্যালওয়্যার
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজের নাম ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে “দারেজ” (Darez) নামের “ম্যালওয়্যার” বা ভাইরাসযুক্ত একটি সফটওয়্যার
জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম দারাজের নাম ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশন জুড়ে বিভ্রান্তি তৈরি করছে “দারেজ” (Darez) নামের “ম্যালওয়্যার” বা ভাইরাসযুক্ত একটিসফটওয়্যার।
“গিভিং গিফটস টু দারাজ সাপোর্টারস- ফ্রি গিফট ফর এভরিওয়ান” বা “দারেজ সমর্থকদের জন্য বিনামূল্যে উপহার” শিরোনামসহ একটি বিভ্রান্তিকর লিঙ্ক দারাজের প্রকৃত গ্রাহকদের ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারসহ অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপগুলোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
লিঙ্কটিতে একবার ক্লিক করলেই তা সরাসরি হ্যাকারদের ওই ব্যক্তির ডিভাইসে অনুপ্রবেশ করতে এবং তার ছবি, পরিচিতি এবং ব্যক্তিগত সকল গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে সাহায্য করছে। আর এই পুরো ঘটনাটি ঘটছে “দারাজ” এর পরিবর্তে “দারেজ” ব্র্যান্ডের পরিবর্তিত নাম ব্যবহার করে।
খালিদ আরাফাত নামে একজন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) ব্র্যান্ডের নাম বা শিরোনামের ভালোভাবে লক্ষ্য না করেই লিঙ্কটিতে ক্লিক করে ফেলেন।
“আমি ভেবেছিলাম এটা দারজের পাঠানো। কিন্তু লিঙ্কটি যখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমার অন্যান্য পরিচিতি মানুষের ইনবক্সে চলে যায় তখন বুঝতে পারি আমি হ্যাকারদের আমার ফোনে অ্যাক্সেস দিয়ে দিয়েছি।”
ব্যবহারকারীরা কোনো সন্দেহ ছাড়া সঠিক বানান লক্ষ্য না করেই হ্যাকাররা সুযোগ করে দিয়েছে। কারণ গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করার জন্য দারাজের বানানের সাথে একটু পরিবর্তন ছাড়া হুবুহু একই লোগো এবং ইউআরএল ব্যবহার করা হয়েছে।
“ম্যালওয়্যার ভাইরাস” সাধারণত কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত করতে, গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে, সুরক্ষিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমে অননুমোদিত অনুপ্রবেশ ঘটাতে বা অযাচিত বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়াও ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে বা ব্যবহারকারীর উপর নজর রাখার উদ্দেশ্যেও গোপনে পরিচালনা করা হয় এই ভাইরাসটি।
লিঙ্কটিতে ক্লিক করলেই আইফোন-১২ জিতেছেন বলে জানানো হয় এবং পুরস্কার পাবার জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে বলা হয়।
জাহাঙ্গীর আলন নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী জানান, তিনি আইফোন-১২ জেতার পর প্রতিটি ধাপ অনুসরণ করেন। পরবর্তীতে দেখতে পান তার ফোন ব্যালেন্স ২০০ টাকার পরিবর্তে শূন্য হয়ে আছে।
আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় সাড়ে তিন কোটিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী এবং প্রায় ২ কোটি ভাইবার ব্যবহারকারী রয়েছে।
এখন অবধি ম্যালওয়্যারটি কেবল ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ভাইবারে ছড়ানো হয়েছে। ভাইরাসটি মোবাইল ফোনের পরিচিতি তালিকা, আইপি (ইন্টারনেট প্রোটোকল) ঠিকানা, অবস্থান, ছবি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে যে কোনও ধরণের ক্ষতি করতে পারে বলে জানিয়েছে আইআইজি কর্মকর্তারা।
আইআইজি ফোরামের সভাপতি সরোয়ার আলম সিকদার ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, এ ধরণের লিঙ্ক সর্বদা হ্যাকারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আসে। যা পরবর্তীতে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে ব্ল্যাকমেল করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে, কেননা একবার হ্যাক করে ফেললে এ বিষয়ে আর কোনো প্রতিকার করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে দারাজ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ইতোমধ্যে তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এই ম্যালওয়্যার ভাইরাস সম্পর্কে গ্রাহকদের সতর্ক করেছে।
এদিকে দারাজ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, যদি দারাজের নাম ব্যবহার করে এভাবে আরও গ্রাহককে হয়রানি করা হয় তাহলে ম্যালওয়্যার তৈরির জন্য দায়ী হ্যাকার গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবে তারা।
@bangla.dhakatribune.com